সেশনজটে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ:
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীরা মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষার দীর্ঘসূত্রিতা, প্রশাসনিক জটিলতা এবং নানা ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন বিলম্বিত হচ্ছে, যা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেশনজট কী এবং কেন হয়?
সাধারণত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পাঠ্যসূচি সম্পন্ন করতে না পারলে সেটাকে সেশনজট বলা হয়। এটি মূলত বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে, যেমন –
✔ পরীক্ষা ও ফল প্রকাশে বিলম্ব: নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা না হওয়া বা পরীক্ষার ফল প্রকাশে দীর্ঘ সময় লাগার কারণে নতুন সেমিস্টার শুরু হতে দেরি হয়।
✔ শিক্ষক সংকট ও প্রশাসনিক দুর্বলতা: পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব হলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
✔ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ধর্মঘট: বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলন, ধর্মঘট এবং প্রশাসনিক সমস্যার কারণে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা ব্যাহত হয়।
✔ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মহামারি: কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেশনজট তৈরি হয়েছে, যা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ
সেশনজটের কারণে শিক্ষার্থীরা একাধিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে –
🔹 ক্যারিয়ার বিলম্বিত হচ্ছে: নির্ধারিত সময়ে পড়াশোনা শেষ করতে না পারায় চাকরির বাজারে প্রবেশ করতে দেরি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
🔹 মানসিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে: অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ছে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে।
🔹 অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে: শিক্ষা জীবন দীর্ঘায়িত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের পরিবারকে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে, যা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে উঠছে।
🔹 উচ্চশিক্ষা ও বিদেশ গমনে সমস্যা: সেশনজটের কারণে নির্ধারিত সময়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করতে না পারায় শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে আবেদনের সুযোগ হারাচ্ছে।
সমাধান কী হতে পারে?
সেশনজট নিরসনে কয়েকটি কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে –
✅ শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস ও পরীক্ষার সময়সূচি সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে।
✅ শিক্ষক নিয়োগ বৃদ্ধি করা: পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকলে ক্লাস ও পরীক্ষার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, তাই নতুন শিক্ষক নিয়োগ জরুরি।
✅ প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি: ফল প্রকাশে দেরি হলে নতুন শিক্ষাবর্ষ বিলম্বিত হয়, তাই প্রশাসনের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
✅ অনলাইন ও বিকল্প পদ্ধতি প্রয়োগ: বিশেষ পরিস্থিতিতে (যেমন: মহামারি) ক্লাস ও পরীক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা (অনলাইন বা সংক্ষিপ্ত সিলেবাস) চালু করা যেতে পারে।
✅ শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি: সেশনজট নিরসনে শিক্ষার্থীদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত আন্দোলন বা কর্মসূচি নিয়ে ভাবতে হবে যাতে পড়াশোনার ক্ষতি না হয়।
সেশনজট শিক্ষার্থীদের জন্য এক মারাত্মক সমস্যা, যা তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত উদ্যোগেই কেবল এই সমস্যা থেকে বের হওয়া সম্ভব। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেশের উচ্চশিক্ষার মান এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চয়তার দিকে চলে যাবে।
0 coment rios:
সংবাদ দৈনিক অনুসন্ধান - ওয়েল্ফশন নিউজ আপডেট - Welftion Welfare Educational Leaders Friendly Trusted Investigation Organization Network.